১৪৪ ধারা প্রত্যাহার
নবীগঞ্জে লাগাতার সংঘর্ষের ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৬ সাংবাদিকসহ ৩২ জনের নামে মামলা! অজ্ঞাত ৫হাজার
- আপডেট সময় : ১২:৫৬:০৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫ ৩৬৪ বার পড়া হয়েছে
নবীগঞ্জে দুই সাংবাদিকের বিরোধকে কেন্দ্র করে পৌর এলাকার ৭টি গ্রামের সংঘর্ষের ঘটনায় টানা ৩ দিন পর ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হয়েছে। সাধারণ মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে এবং কিছু কিছু দোকানপাট খুলতে শুরু করেছে। যানবাহন চলাচলও স্বাভাবিক হয়েছে। শহরে সুনশান নীরবতা লক্ষ্য করা গেছে। সাধারণ মানুষ এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে এখনও ভীতি কেটে উঠেনি। এখনো জনশুন্য রয়েছে নবীগঞ্জ শহরের ৭টি গ্রাম। এ ঘটনায় পূর্ব তিমিরপুর, পশ্চিম তিমির পুর, চরগাঁও, আনমনু,রাজাবাদ, নোয়াপাড়া ও রাজনগর এসব গ্রামে যৌথবাহিনীর চিরুনি অভিযান চলছে। এঘটনায় গত বুধবার রাতে পুলিশ বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৬ জন সাংবাদিকের নাম উল্লেখসহ ৩২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৪/৫ হাজার জনের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্ত সাংবাদিকরা হলেন, আশাহীদ আলী আশা, সেলিম মিয়া তালুকদার, নাবেদ, আলমগীর, এমএ আহমদ আজাদ, আলাউদ্দিন। নবীগঞ্জ থানার এসআই রিপন দাশ বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন।

নবীগঞ্জ থানার মামলা নং ১০। তারিখ ০৯/০৭/২০২৫ই। মামলার উল্লেখিত ৩২ আসামী হলেন- সাবেক ৩নং ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের যুবলীগ সভাপতি বর্তমান গণঅধিকার পরিষদের উপজেলা শাখার সহ-সভাপতি আশাহিদ আলী আশা (৪২), পূর্ব তিমিরপুর গ্রামের দৈনিক হবিগঞ্জ সময় পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সেলিম তালুকদার (৩৮), আনমুনু গ্রামের দারোগা মিয়ার ছেলে বাদল মিয়া (২৮), মৃত্যু আব্দুর রহিম মিয়ার ছেলে নাবিদ বিয়া (২৮), রাজাবাদ গ্রামের নজরুল মিয়ার ছেলে সফিকুল ইসলাম নাহিদ (২৬), মিরাস মিয়ার ছেলে আমলগীর মিয়া (৪২), সিট ফরিদপুর গ্রামের আব্দুর জব্বারের ছেলে সাংবাদিক এম এ আহমদ আজাদ (৪৫), পৌর এলাকার নোয়াপাড়া গ্রামের মৃত দলাই মিয়ার ছেলে সাকিব মিয়া (২১), ছোট সাকুয়া গ্রামের রফিক মিয়া (৫২), চরগাও গ্রামের এমদাদুল চৌধুরী (৩৬), কসবা গ্রামের মিলন মিয়া (২৯), হাফেজ দুদু মিয়ার ছেলে এমদাদুল হক (২৯), আশরাফুল ইসলাম (২৯), নোয়াপাড়া গ্রামের আলীর ছেলে রবিউল হাসান মিলন (২১), আনমুনু গ্রামের আব্দুল মন্নাপ মিয়ার ছেলে জহিরুল ইসলাম সোহেল (৪২), রাশেদ মিয়া (৩৪), কাজল মিয়া (৩৫), সাইফুর রহমান বাবু (৩২), আব্দুল আওয়ালের ছেলে নয়ন (৩৪), আব্দুল কাদির মিয়ার ছেলে সেজন মিয়া (৩২), মৃত সাবলাল মিয়ার ছেলে সানু মিয়া (৫২), পশ্চিম তিমিরপুর গ্রামের লোকমান মিয়ার ছেলে এনাম মেম্বার (৫২), চানু মিয়ার ছেলে হাসান মিয়া (২০), গোলজার মিয়ার ছেলে নূর জামিল (২০), লাল মিয়ার ছেলে বশির মেম্বার (৫০) ও তার ভাই ফজল কমিশনার (৫২), চরগাও গ্রামের শেখ কবির মিয়ার ছেলে শেখ শিপন (৩২), পাঞ্জারাই হলিমপুর গ্রামের মৃত্যু নূর মিয়ার ছেলে রাকিব মিয়া (৩৫), তিমিরপুর গ্রামের মৃত্যু রামিজ উল্লাহর ছেলে আলাউদ্দিন মিয়া সাবেক কমিশনার (৫৫), আব্দুর নূর মিয়ার ছেলে মহসিন মিয়া (৩৫), মৃত্যু নাজির মিয়ার ছেলে নূরুজ্জামান (৩০) সহ অজ্ঞাত রাখা হয় ৪ থেকে ৫ হাজার জন।
অপরদিকে ঘটনাটি নিস্পত্তির জন্য বুধবার বিকেলে শহরের বাহিরে সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সালিশ প্রক্রিয়ার জন্য নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি বাজার হাফিজিয়া সিনিয়র দাখিল মাদ্রাসায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় ১৭ সদস্য
বিশিষ্ট সালিশ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছে। সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে- নবীগঞ্জের চলমান বিবাদের মিমাংসার অগ্রগতি সাধন ৫টি বিষয় প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। সালিশ বোর্ড গঠন; উভয় পক্ষের সম্মতি গ্রহণ; প্রশাসনের সাথে সমন্বয় সাধন করা; নিহত ফারুক মিয়ার জন্য শোক প্রকাশ করা হয়; অহেতুক নিরীহ জনসাধারণকে প্রশাসন হয়রানী না করা ও সংঘর্ষে জড়িত উভয় পক্ষ পরিবেশ শান্ত থাকার আহ্বান।
উল্লেখ্য, স্থানীয় দুই সাংবাদিকের মধ্যে একে অপরকে কটুক্তি করা নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়। এ বিরোধ গড়ায় কয়েক গ্রামবাসীর সংঘর্ষে। প্রথমে এক পক্ষে পূর্ব তিমিরপুর এবং অন্য পক্ষে আনমনু গ্রামবাসী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। পরে তাদের পক্ষ নিয়ে আরও কয়েক গ্রামের মানুষ সংঘর্ষে জড়ায়। শেষ পর্যন্ত সংঘর্ষ রূপ নেয় দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে। সোমবার নবীগঞ্জ বাজারে কয়েক ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষে পূর্ব তিমিরপুর গ্রামের বাসিন্দা এ্যাম্বুলেন্স চালক ফারুক মিয়া (৪২) মারা যান। আহত হন শতাধিক মানুষ। এ সময় নবীগঞ্জ বাজারের শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, যানবাহন, বেসরকারি হাসপাতাল ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগ করা হয়। এতে ব্যবসায়ীদের অন্তত ৩০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা। এক পর্যায়ে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে। এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্টেট মোঃ রুহুল আমীন পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেন। ৩ দিন পর গতকাল বৃহস্পতিবার ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হয়।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মো. কামরুজ্জামান জানান, এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের একটি মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলায় এখন পর্যন্ত ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর টহল অব্যাহত রয়েছে।













