ঢাকা ১০:২১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ব্যবসায়ী হ*ত্যার ঘটনায় অস্ত্রসহ গ্রেফতার ৪ Logo হবিগঞ্জে ১৮৮০ বোতল বিদেশি মদ‘সহ  গ্রেফতার দুই  Logo খুলনায় যুবদল নেতাকে গুলি করে ও পায়ের রগ কেটে হত্যা Logo চাঁদা না দেওয়ায় ব্যবসায়ীকে পাথর মেরে হত্যা, ভিডিও ভাইরাল Logo চাঁদা না দেওয়ায় ব্যবসায়ীকে পাথর মেরে হত্যা, ভিডিও ভাইরাল Logo হবিগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার Logo নবীগঞ্জে লাগাতার সংঘর্ষের ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৬ সাংবাদিকসহ ৩২ জনের নামে মামলা! অজ্ঞাত ৫হাজার Logo মাধবপুরে এসএসসি পরীক্ষায় ফেল: কিশোরীর আত্মহত্যা Logo পাইকপাড়ায় ফিল্মি স্টাইলে ছাত্রীকে অপহরণের ঘটনায় সহোদরসহ গ্রেফতার ৩ Logo জনি হত্যার আসামির ওপর আদালত প্রাঙ্গণে হামলা, ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা, দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের এজাহার দায়ের। সিসি ফুটেজ দেখে গ্রেপ্তারের নির্দেশ 

যে অভিশাপে ৮০ বছরের বেশি টেকে না ইহুদী রাষ্ট্র!

ডেস্ক নিউজ
  • আপডেট সময় : ০২:২৮:৩২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫ ৮০ বার পড়া হয়েছে
বিজয় নিউজ ২৪ অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

গাজায় ইসরায়েলের চলমান আগ্রাসন ও নির্মম ধ্বংসযজ্ঞের পেছনে রাজনৈতিক, সামরিক ও কৌশলগত নানা ব্যাখ্যা থাকলেও সম্প্রতি আবার আলোচনায় এসেছে একটি পুরনো ধর্মীয় ভবিষ্যদ্বাণী—“অষ্টম দশকের অভিশাপ”। ইংরেজিতে যেটিকে বলা হয় Curse of the Eighth Decade এবং আরবিতে La’nat al-‘Aqd al-Thamin।

এই ধারণাটি এসেছে ইহুদি ধর্মীয় শাস্ত্র তালমুদ-এর একটি পুরাতন ব্যাখ্যা থেকে, যেখানে বলা হয়—কোনো ইহুদি রাষ্ট্রের আয়ু ৮০ বছরের বেশি হয় না। পতন আসবে বাইরের আক্রমণে নয়, বরং ভেতরের বিভাজন ও গৃহবিবাদের মাধ্যমে।

ইতিহাসও এই ধারণার পক্ষে সাক্ষ্য দিচ্ছে। বিগত প্রায় ২,০০০ বছরে ইহুদিরা যেসব সার্বভৌম রাষ্ট্র গড়েছে—যেমন নবী দাউদ (আ.)-এর রাজত্ব বা হাসমোনিয়ান রাজ্য—তা একটিও ৮০ বছরের বেশি স্থায়ী হয়নি।

বর্তমান ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্ম ১৯৪৮ সালে। অর্থাৎ ২০২৮ সালে পূর্ণ হবে এই রাষ্ট্রের ৮০ বছর। এখন সেই সময়সীমা ঘনিয়ে আসতেই ইসরায়েলি সমাজ ও রাজনীতিতে বাড়ছে উদ্বেগ। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন—ইতিহাস কি এবারও নিজেকে পুনরাবৃত্তি করতে যাচ্ছে?

এই ধারণাকে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করেছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ বারাক। তিনি ইয়েদিয়োত আহরোনোত পত্রিকায় এক নিবন্ধে বলেন, “ইসরায়েলি সমাজে বিভাজন আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। ধর্মনিরপেক্ষ, কট্টর ধর্মভিত্তিক, আরব ও জায়োনিস্ট গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে পারস্পরিক অসহিষ্ণুতা রাষ্ট্রটির ভবিষ্যতের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

সাবেক প্রেসিডেন্ট রিউভেন রিভলিন আরও পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেছেন— ইসরায়েলের বর্তমান সমাজ গঠিত হয়েছে প্রায় ৩৮% সেকুলার ইহুদি, ১৫% হিন্দি জায়োনিস্ট, ২৫% আরব এবং ২৫% অতি-রক্ষণশীল ধর্মভিত্তিক ইহুদিদের দ্বারা।

“এই বৈচিত্র্য এখন একতা না এনে সংঘাতের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে,”—মন্তব্য করেন রিভলিন।

এমনকি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ২০১৭ সালে হারেতজ পত্রিকায় একটি নিবন্ধে লেখেন, “ইসরায়েল রাষ্ট্রকে টিকিয়ে রাখতে হলে জাতিকে অভ্যন্তরীণ বিভাজন থেকে রক্ষা করতে হবে। অষ্টম দশকের অভিশাপ যাতে বাস্তবে পরিণত না হয়, সেটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।”

তার সাম্প্রতিক নির্বাচনী প্রচারণাতেও উঠে আসে এই “অভিশাপ” প্রসঙ্গ। নেতানিয়াহু দাবি করেন, “আমার নেতৃত্বাধীন সরকারই ইসরায়েলকে এই ভবিষ্যদ্বাণীর ছায়া থেকে মুক্তি দিতে সক্ষম।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, “অষ্টম দশকের অভিশাপ” আসলে একটি ধর্মীয় ভাষ্য হলেও এটি রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতার প্রতিচ্ছবিও হয়ে উঠেছে। আগের ইহুদি রাষ্ট্রগুলো যেমন নিজেরা ভেঙে পড়েছে, তেমনি ইসরায়েলও এখন গৃহবিরোধ, ধর্মনিরপেক্ষতা বনাম মৌলবাদ এবং জাতিগত দ্বন্দ্বে জর্জরিত। ফলে এই অভিশাপকে ধর্মীয় কুসংস্কার নয়, বরং একটি সতর্কবার্তা হিসেবেই অনেকে দেখছেন।

বিশেষ করে গাজায় চলমান যুদ্ধ, আন্তর্জাতিকভাবে ইসরায়েলের নিন্দা, রাজনৈতিক নেতৃত্বের অস্থিতিশীলতা এবং সমাজে দৃষ্টিগোচর বিভক্তি—সব মিলিয়ে “অভিশাপ”-এর বাস্তবায়নকে অনেক ইসরায়েলিই আর অস্বীকার করতে পারছেন না।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

যে অভিশাপে ৮০ বছরের বেশি টেকে না ইহুদী রাষ্ট্র!

আপডেট সময় : ০২:২৮:৩২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫

 

গাজায় ইসরায়েলের চলমান আগ্রাসন ও নির্মম ধ্বংসযজ্ঞের পেছনে রাজনৈতিক, সামরিক ও কৌশলগত নানা ব্যাখ্যা থাকলেও সম্প্রতি আবার আলোচনায় এসেছে একটি পুরনো ধর্মীয় ভবিষ্যদ্বাণী—“অষ্টম দশকের অভিশাপ”। ইংরেজিতে যেটিকে বলা হয় Curse of the Eighth Decade এবং আরবিতে La’nat al-‘Aqd al-Thamin।

এই ধারণাটি এসেছে ইহুদি ধর্মীয় শাস্ত্র তালমুদ-এর একটি পুরাতন ব্যাখ্যা থেকে, যেখানে বলা হয়—কোনো ইহুদি রাষ্ট্রের আয়ু ৮০ বছরের বেশি হয় না। পতন আসবে বাইরের আক্রমণে নয়, বরং ভেতরের বিভাজন ও গৃহবিবাদের মাধ্যমে।

ইতিহাসও এই ধারণার পক্ষে সাক্ষ্য দিচ্ছে। বিগত প্রায় ২,০০০ বছরে ইহুদিরা যেসব সার্বভৌম রাষ্ট্র গড়েছে—যেমন নবী দাউদ (আ.)-এর রাজত্ব বা হাসমোনিয়ান রাজ্য—তা একটিও ৮০ বছরের বেশি স্থায়ী হয়নি।

বর্তমান ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্ম ১৯৪৮ সালে। অর্থাৎ ২০২৮ সালে পূর্ণ হবে এই রাষ্ট্রের ৮০ বছর। এখন সেই সময়সীমা ঘনিয়ে আসতেই ইসরায়েলি সমাজ ও রাজনীতিতে বাড়ছে উদ্বেগ। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন—ইতিহাস কি এবারও নিজেকে পুনরাবৃত্তি করতে যাচ্ছে?

এই ধারণাকে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করেছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ বারাক। তিনি ইয়েদিয়োত আহরোনোত পত্রিকায় এক নিবন্ধে বলেন, “ইসরায়েলি সমাজে বিভাজন আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। ধর্মনিরপেক্ষ, কট্টর ধর্মভিত্তিক, আরব ও জায়োনিস্ট গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে পারস্পরিক অসহিষ্ণুতা রাষ্ট্রটির ভবিষ্যতের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

সাবেক প্রেসিডেন্ট রিউভেন রিভলিন আরও পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেছেন— ইসরায়েলের বর্তমান সমাজ গঠিত হয়েছে প্রায় ৩৮% সেকুলার ইহুদি, ১৫% হিন্দি জায়োনিস্ট, ২৫% আরব এবং ২৫% অতি-রক্ষণশীল ধর্মভিত্তিক ইহুদিদের দ্বারা।

“এই বৈচিত্র্য এখন একতা না এনে সংঘাতের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে,”—মন্তব্য করেন রিভলিন।

এমনকি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ২০১৭ সালে হারেতজ পত্রিকায় একটি নিবন্ধে লেখেন, “ইসরায়েল রাষ্ট্রকে টিকিয়ে রাখতে হলে জাতিকে অভ্যন্তরীণ বিভাজন থেকে রক্ষা করতে হবে। অষ্টম দশকের অভিশাপ যাতে বাস্তবে পরিণত না হয়, সেটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।”

তার সাম্প্রতিক নির্বাচনী প্রচারণাতেও উঠে আসে এই “অভিশাপ” প্রসঙ্গ। নেতানিয়াহু দাবি করেন, “আমার নেতৃত্বাধীন সরকারই ইসরায়েলকে এই ভবিষ্যদ্বাণীর ছায়া থেকে মুক্তি দিতে সক্ষম।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, “অষ্টম দশকের অভিশাপ” আসলে একটি ধর্মীয় ভাষ্য হলেও এটি রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতার প্রতিচ্ছবিও হয়ে উঠেছে। আগের ইহুদি রাষ্ট্রগুলো যেমন নিজেরা ভেঙে পড়েছে, তেমনি ইসরায়েলও এখন গৃহবিরোধ, ধর্মনিরপেক্ষতা বনাম মৌলবাদ এবং জাতিগত দ্বন্দ্বে জর্জরিত। ফলে এই অভিশাপকে ধর্মীয় কুসংস্কার নয়, বরং একটি সতর্কবার্তা হিসেবেই অনেকে দেখছেন।

বিশেষ করে গাজায় চলমান যুদ্ধ, আন্তর্জাতিকভাবে ইসরায়েলের নিন্দা, রাজনৈতিক নেতৃত্বের অস্থিতিশীলতা এবং সমাজে দৃষ্টিগোচর বিভক্তি—সব মিলিয়ে “অভিশাপ”-এর বাস্তবায়নকে অনেক ইসরায়েলিই আর অস্বীকার করতে পারছেন না।