ঢাকা ০৬:০৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo নিখোঁজের চার দিনেও খোঁজ মিলেনি মাদ্রাসা ছাত্র রিফাত হাসানের Logo লাখাইয়ে ঈদগাহ মাঠে বসাকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষ আহত ১৬ Logo হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেট এক্সপ্রেস বাস চলাচল বন্ধ Logo এবার ঈদে পশু কুরবানি কমেছে পৌনে ১৩ লাখ Logo বাহুবলে আলী আহমদ হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর ও লুটপাট Logo বাহুবলে দু’পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে নিহত ১ Logo মাধবপুরে রাবার ড্যাম থেকে নিখোঁজ ব্যক্তির লাশ উদ্ধার Logo বানিয়াচংয়ে ঈদের ২য় দিন টেটা যুদ্ধে নিহত ১, আহত অর্ধশত Logo জলাবদ্ধতা নিরসনে পুরাতন খোয়াই নদী, পুকুর ও জলাশয় নিয়ে শীর্ষক আলোচনা সভা Logo শেখ মুজিব ও জাতীয় চার নেতাসহ মুজিবনগর সরকারের সকলেই মুক্তিযোদ্ধা: ফারুক ই আজম

এতিম শিশু নির্যাতনকারী নুরুল হক কারাগারে ॥ নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের

হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০১:৩১:২৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩০ মার্চ ২০২৫ ১৬১ বার পড়া হয়েছে
বিজয় নিউজ ২৪ অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

হবিগঞ্জ শহরের রাজনগর এতিমখানায় ঘুড়ি উড়ানোর।

অপরাধে নাঈম হাসান নামের শিশুকে নির্যাতনকারী দলিল লিখক নুরুল হক (৫৫) এর জামিন না মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল শনিবার (২৮মার্চ) বিকালে হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমল-১ আদালতে তার জামিন আবেদন করলে আদালত তার জামিন না মঞ্জুর করেন। এদিকে এ ঘটনায় গতকাল শনিবার সকালে শিশুর মা নিউ মুসলিম কোয়ার্টারের বাসিন্দা মৃত গোলাম হাসানের স্ত্রী পারুল আক্তার বাদি হয়ে কোর্ট স্টেশন এলাকার বাসিন্দা মৃত লাল মিয়ার পুত্র নুরুল হক, সুলতান মাহমুদপুর এলাকার জসিম উদ্দিন কে আসামি করে মামলা করেন।

এর আগে গত শুক্রবার বিকালে এতিমখানার ছাত্র নাঈম হাসান (১০) ছাদে ঘুড়ি উড়াচ্ছিলো। এসময় এতিমখানার কমিটির সদস্য দলিল লিখক নুরুল হক (৪৫) তাকে নীচে নেমে আসতে বলেন। ওই ছাত্র তার কথামতো কেনো সাথে সাথে নিচে নেমে এলোনা এমন অভিযোগ তুলে নাঈমকে অমানবিক নির্যাতন করেন নুরুল হক। এক পর্যায়ে সে চিৎকার শুরু করলে আশপাশের লোকজন এসে তাকে রক্ষা করেন। সন্ধ্যার পর সে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে তাকে থানায় নিয়ে আসা হয়। খবরটি এলাকায় জানাজানি হলে উত্তেজিত জনতা এতিমখানা থেকে নুরুল হককে আটক করে উত্তম মধ্যম দেয়।

এদিকে ওসি আলমগীর কবির ওই ছাত্রের জবানবন্দি শুনে সাথে সাথেই রাজনগর পুলিশ পাঠিয়ে জনতার হাত থেকে নুরুল হককে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন।

অভিযোগ রয়েছে, হবিগঞ্জ শহরের রাজনগর ইসলামিয়া এতিমখানা কিছু প্রভাবশালীদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। যার যার ইচ্ছামতো এতিমখানাটি পরিচালনা করছেন। ইতোপূর্বেও কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় তাদের দৌরাত্ম দিনদিন বেড়েই চলেছে। বিগত সরকারের আমলে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ছত্রছায়ায় থেকে এর সাথে জড়িত অনেকেই অনিয়ম করে আসছিলেন। কিন্তু কোনোকালেই ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের প্রভাব জেলার অনেক প্রতিষ্ঠানে পড়লেও রাজনগর ইসলামিয়া এতিমখানায় পড়েনি। যে কারণে এখানকার শিশুদের ভাগ্য বদলায়নি। কয়েক বছর আগে পরিচালনা কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে ফ্রিজে জায়গা না থাকার অজুহাতে মাংস বিক্রির অভিযোগ উঠে। এতিমদের জন্য মানুষের দান করা গরু-খাসির মাংস নামমাত্র মূল্যে নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করার মতো গুরুতর অভিযোগ ছিলো পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে নানা আলোচনা সমালোচনা হলেও দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি দায়ীদের বিরুদ্ধে। এতিমদের মাংস কমিটির সদস্যদের মাঝে ভাগ বাটোয়ারার কারণে অপুষ্টিজনিত নানা রোগে ভোগে থাকে শিশুরা। এসবের প্রতিবাদ করলেই শিশুদের উপর চলে নানা ধরণের হুমকি-ধামকি। বের করে দেয়া হয় এতিমখানা থেকে। আর এতিম এই শিশুদের দিয়ে সারাদিন বিভিন্ন কাজ করানোর অভিযোগতো আছেই। অভিযোগ রয়েছে সেই সময় পরিচালিত কমিটির অমানবিক কর্মকান্ডে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন হাফিজখানার অনেক শিক্ষকরাও। কিন্তু শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কারণে এসব অভিযোগের প্রতিকার হয়নি বছরের পর বছর ধরে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ১৯৯০ সালে হবিগঞ্জ শহরের রাজনগর এলাকায় নিজস্ব জায়গাতে ইসলামিয়া এতিমখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে টিনের ঘরে কার্যক্রম শুরু হলেও পরবর্তীতে সরকারি-বেসরকারি অনুদানে নির্মিত হয় ৪ তলা নিজস্ব ভবন। এখানে অনেকেই গরু, খাসী প্রদানসহ নানা সহযোগিতা করে থাকেন। কিন্তু এতো আয়ের পরও ভাল খাবার জোটেনা এতিমদের মুখে। ফ্রিজ ভর্তি মাংস থাকলেও তাঁদের ভাগ্যে জুটে বাসি খাবার। এমন অভিযোগ এখন নিত্যকার। এ ছাড়া দিনের পর দিন এতিম শিশুদের দিয়ে করানো হয় বিভিন্ন পরিশ্রমের কাজ। এমনকি কোমলমতি এসব শিশুদের দিয়ে ইট, বালি, সিমেন্ট, রড আনা-নেয়ার মতো কঠিন কাজও করানো হয়। এসব কাজ করতে গিয়ে অসুস্থ্য হলেও দেয়া হয়না ভালো চিকিৎসা। উল্টো অসুস্থ্য শরীর নিয়ে কাজে যেতে না চাইলেই নির্যাতনের পাশাপাশি দেয়া হয় বিভিন্ন ধরণে হুমকি-ধামকি। আহত নাঈম জানায়, অভাব অনটনের সংসারে তা মা এতিমখানায় দিয়েছিলো। সে ৫ম শ্রেণির ছাত্র। প্রায়ই এতিমখানার পরিচালনা কমিটির সদস্য ডিড রাইটার নুরুল হক তাকে দিয়ে কাজ করাতো। কথা না শুনলে চলতো নির্যাতন। এ বিষয়ে সদর থানার ওসি আলমগীর কবির জানান, ঘটনা শুনার সাথে সাথে তাকে গ্রেফতার করে মামলা নেয়া হয়েছে। অন্যদের ধরতে অভিযান চলছে। প্রয়োজনে তাকে রিমান্ডে আনা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

এতিম শিশু নির্যাতনকারী নুরুল হক কারাগারে ॥ নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের

আপডেট সময় : ০১:৩১:২৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩০ মার্চ ২০২৫

 

হবিগঞ্জ শহরের রাজনগর এতিমখানায় ঘুড়ি উড়ানোর।

অপরাধে নাঈম হাসান নামের শিশুকে নির্যাতনকারী দলিল লিখক নুরুল হক (৫৫) এর জামিন না মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল শনিবার (২৮মার্চ) বিকালে হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমল-১ আদালতে তার জামিন আবেদন করলে আদালত তার জামিন না মঞ্জুর করেন। এদিকে এ ঘটনায় গতকাল শনিবার সকালে শিশুর মা নিউ মুসলিম কোয়ার্টারের বাসিন্দা মৃত গোলাম হাসানের স্ত্রী পারুল আক্তার বাদি হয়ে কোর্ট স্টেশন এলাকার বাসিন্দা মৃত লাল মিয়ার পুত্র নুরুল হক, সুলতান মাহমুদপুর এলাকার জসিম উদ্দিন কে আসামি করে মামলা করেন।

এর আগে গত শুক্রবার বিকালে এতিমখানার ছাত্র নাঈম হাসান (১০) ছাদে ঘুড়ি উড়াচ্ছিলো। এসময় এতিমখানার কমিটির সদস্য দলিল লিখক নুরুল হক (৪৫) তাকে নীচে নেমে আসতে বলেন। ওই ছাত্র তার কথামতো কেনো সাথে সাথে নিচে নেমে এলোনা এমন অভিযোগ তুলে নাঈমকে অমানবিক নির্যাতন করেন নুরুল হক। এক পর্যায়ে সে চিৎকার শুরু করলে আশপাশের লোকজন এসে তাকে রক্ষা করেন। সন্ধ্যার পর সে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে তাকে থানায় নিয়ে আসা হয়। খবরটি এলাকায় জানাজানি হলে উত্তেজিত জনতা এতিমখানা থেকে নুরুল হককে আটক করে উত্তম মধ্যম দেয়।

এদিকে ওসি আলমগীর কবির ওই ছাত্রের জবানবন্দি শুনে সাথে সাথেই রাজনগর পুলিশ পাঠিয়ে জনতার হাত থেকে নুরুল হককে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন।

অভিযোগ রয়েছে, হবিগঞ্জ শহরের রাজনগর ইসলামিয়া এতিমখানা কিছু প্রভাবশালীদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। যার যার ইচ্ছামতো এতিমখানাটি পরিচালনা করছেন। ইতোপূর্বেও কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় তাদের দৌরাত্ম দিনদিন বেড়েই চলেছে। বিগত সরকারের আমলে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ছত্রছায়ায় থেকে এর সাথে জড়িত অনেকেই অনিয়ম করে আসছিলেন। কিন্তু কোনোকালেই ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের প্রভাব জেলার অনেক প্রতিষ্ঠানে পড়লেও রাজনগর ইসলামিয়া এতিমখানায় পড়েনি। যে কারণে এখানকার শিশুদের ভাগ্য বদলায়নি। কয়েক বছর আগে পরিচালনা কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে ফ্রিজে জায়গা না থাকার অজুহাতে মাংস বিক্রির অভিযোগ উঠে। এতিমদের জন্য মানুষের দান করা গরু-খাসির মাংস নামমাত্র মূল্যে নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করার মতো গুরুতর অভিযোগ ছিলো পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে নানা আলোচনা সমালোচনা হলেও দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি দায়ীদের বিরুদ্ধে। এতিমদের মাংস কমিটির সদস্যদের মাঝে ভাগ বাটোয়ারার কারণে অপুষ্টিজনিত নানা রোগে ভোগে থাকে শিশুরা। এসবের প্রতিবাদ করলেই শিশুদের উপর চলে নানা ধরণের হুমকি-ধামকি। বের করে দেয়া হয় এতিমখানা থেকে। আর এতিম এই শিশুদের দিয়ে সারাদিন বিভিন্ন কাজ করানোর অভিযোগতো আছেই। অভিযোগ রয়েছে সেই সময় পরিচালিত কমিটির অমানবিক কর্মকান্ডে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন হাফিজখানার অনেক শিক্ষকরাও। কিন্তু শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কারণে এসব অভিযোগের প্রতিকার হয়নি বছরের পর বছর ধরে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ১৯৯০ সালে হবিগঞ্জ শহরের রাজনগর এলাকায় নিজস্ব জায়গাতে ইসলামিয়া এতিমখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে টিনের ঘরে কার্যক্রম শুরু হলেও পরবর্তীতে সরকারি-বেসরকারি অনুদানে নির্মিত হয় ৪ তলা নিজস্ব ভবন। এখানে অনেকেই গরু, খাসী প্রদানসহ নানা সহযোগিতা করে থাকেন। কিন্তু এতো আয়ের পরও ভাল খাবার জোটেনা এতিমদের মুখে। ফ্রিজ ভর্তি মাংস থাকলেও তাঁদের ভাগ্যে জুটে বাসি খাবার। এমন অভিযোগ এখন নিত্যকার। এ ছাড়া দিনের পর দিন এতিম শিশুদের দিয়ে করানো হয় বিভিন্ন পরিশ্রমের কাজ। এমনকি কোমলমতি এসব শিশুদের দিয়ে ইট, বালি, সিমেন্ট, রড আনা-নেয়ার মতো কঠিন কাজও করানো হয়। এসব কাজ করতে গিয়ে অসুস্থ্য হলেও দেয়া হয়না ভালো চিকিৎসা। উল্টো অসুস্থ্য শরীর নিয়ে কাজে যেতে না চাইলেই নির্যাতনের পাশাপাশি দেয়া হয় বিভিন্ন ধরণে হুমকি-ধামকি। আহত নাঈম জানায়, অভাব অনটনের সংসারে তা মা এতিমখানায় দিয়েছিলো। সে ৫ম শ্রেণির ছাত্র। প্রায়ই এতিমখানার পরিচালনা কমিটির সদস্য ডিড রাইটার নুরুল হক তাকে দিয়ে কাজ করাতো। কথা না শুনলে চলতো নির্যাতন। এ বিষয়ে সদর থানার ওসি আলমগীর কবির জানান, ঘটনা শুনার সাথে সাথে তাকে গ্রেফতার করে মামলা নেয়া হয়েছে। অন্যদের ধরতে অভিযান চলছে। প্রয়োজনে তাকে রিমান্ডে আনা হবে।