টাঙ্গাইলে সাবেক এমপির বাড়ি দখল করে ‘পাগলের আশ্রম’ চালু

- আপডেট সময় : ০৮:৫৩:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ মার্চ ২০২৫ ১২৬ বার পড়া হয়েছে
টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য জোয়াহেরুল ইসলামের টাঙ্গাইল শহরের আকুরটাকুর পাড়ার ছয়তলা বাসভবন দখল করে পাগলের আশ্রম চালু করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সংগঠক পরিচয় দেওয়া এক তরুণী!!
টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) জোয়াহেরুল ইসলামের বাড়ি দখল করে ‘পাগলের আশ্রম’ চালু করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক পরিচয়ধারী এক তরুণী।!! আজ শনিবার দুপুরে প্রায় ২৫ জন ছিন্নমূল মানসিক প্রতিবন্ধীকে নিয়ে এই আশ্রম চালু করেন তিনি।!!
ওই তরুণীর নাম মারইয়াম মুকাদ্দাস ওরফে মিষ্টি।! তিনি নিজেকে আল মুকাদ্দাস ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সংগঠক হিসেবে পরিচয় দেন!। তিনি বলেন, বাসাইল উপজেলার যশিহাটি গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মাজহারুল ইসলামের মেয়ে তিনি। স্নাতক করেছেন ঢাকার শান্তা মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে। কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নন বলে দাবি করেন তিনি।!
আজ দুপুর ১২টার দিকে জোয়াহেরুল ইসলামের শহরের বাড়িটি দখলের সময় সেখানে সাবেক এই সংসদ সদস্যের পরিবারের কেউ ছিলেন না।!
বেলা তিনটার দিকে শহরের আকুরটাকুর ছোট কালিবাড়ী এলাকায় জোয়াহেরুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছয়তলা ভবনের নিচতলায় বিভিন্ন বয়সের ১১ জন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষ অবস্থান করছেন। আরও লোকজন ছিলেন ভবনটির তৃতীয় তলায়। সেখানে অবস্থান করছিলেন মারইয়াম মুকাদ্দাস নামের ওই তরুণী।!! তিনি বলেন, তার এই আশ্রম সদর উপজেলার খেজুরতলা এলাকায় ছিল।!! আজ শনিবার দুপুরে জোয়াহেরুল ইসলামের বাড়িতে এটি স্থানান্তর করা হলো।!! তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতারা জনগণের টাকা লুটপাট করে বাড়িঘরসহ এসব সম্পদ করেছিলেন। তাই এগুলো এখন জনকল্যাণে ব্যবহার করা হবে।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৬ ফেব্রুয়ারি মারইয়াম মুকাদ্দাসের নেতৃত্বে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান খান, সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম, সাবেক পৌর মেয়র জামিলুর রহমানের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
ছয়তলা ভবনের নিচতলায় বিভিন্ন বয়সের ১১ জন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষ অবস্থান করছেন।!! আরও লোকজন ছিলেন ভবনটির তৃতীয় তলায়!!
দুই দিন আগে মারইয়াম মুকাদ্দাস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে লিখেছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলামের বাসা পাগলের আশ্রম, প্রয়াত সভাপতি ফজলুর রহমান খানের বাসা প্রতিবন্ধীদের আশ্রম, সাবেক এমপি তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনিরের বাসা অ্যানিমেল শেল্টার, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুজ্জামান সোহেলের বাসা বৃদ্ধাশ্রম, সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের বাসা এতিমখানা এবং আওয়ামী লীগ অফিস পাবলিক টয়লেট করা হবে। সেখানে তিনি আরও লিখেছিলেন ‘আরও নাম সাজেস্ট করুন, তথ্য দিন। একেক করে সমাজের ও টাঙ্গাইলের উন্নয়নের কাজে লাগুক আওয়ামী লীগের অবৈধ সম্পদ।’
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জোয়াহেরুল ইসলাম আত্মগোপনে চলে গেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে দুটি হত্যাসহ অর্ধ ডজন মামলা আছে। তাঁর বাড়ি দখলের বিষয়ে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাঁকে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে তাঁর মেয়ে জাকিয়া ইসলাম বলেন, ঘটনার সময় তাঁদের বাড়িতে কেউ ছিলেন না। তাঁদের পরিবারের প্রায় সবার নামেই মামলা থাকায় বাড়িতে থাকছেন না।!! তিনি বলেন, ‘দেশে আইন নেই, প্রশাসন নেই, তাই এমন অরাজকতা হচ্ছে।’
মারইয়াম মুকাদ্দাস নামে এই তরুণী নিজেকে আল মুকাদ্দাস ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সংগঠক হিসেবে পরিচয় দেন!!
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের টাঙ্গাইল শাখার সদস্যসচিব আবু আহমেদ শেরশাহ বলেন, ‘মারইয়াম মুকাদ্দাস বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটিতে নেই। ওনার কোনো কর্মের দায় আমরা নেব না। আন্দোলনের সময় অনেকেই সক্রিয় ছিল।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের টাঙ্গাইল শাখার আহ্বায়ক আলামিন তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘মিষ্টি আপুর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের বিষয়ে আমি অবগত নই; এবং আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, আমার সহযোদ্ধারাও অবগত নন। তাঁর কর্মকাণ্ডের প্রতি আমার কোনো ধরনের সমর্থন নেই।’
টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীর আহম্মেদ বলেন, এ বিষয়ে তাঁর কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি!! তিনি লোকমুখে শুনেছেন।