জাতীয় নাগরিক পার্টি’র আত্মপ্রকাশ,হবিগঞ্জের অংশগ্রহণ

- আপডেট সময় : ১০:৩২:১৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ১০৪ বার পড়া হয়েছে
নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’র আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে হবিগঞ্জের নেতা কর্মীরা অংশগ্রহণ করেছে।
শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেল থেকে রাজধানী ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে দলটির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হবিগঞ্জ জেলার নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।
উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নবগঠিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হবিগঞ্জ জেলা কমিটির আহ্বায়ক আরিফ তালুকদার, সদস্য সচিব মাহদী হাসান, মুখ্য সংগঠক আশরাফুল ইসলাম সুজন, মুখপাত্র রাশেদা ইসলাম সহ আরো অনেকেই।
জুলাই আন্দোলনের ছাত্রদের নিয়ে গঠিত নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ আজ আনুষ্ঠানিকভাবে হয়েছে।
নতুন দলটির নেতৃত্বে দেওয়া হয়েছে জুলাই আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে।
এর আগে আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে জাতীয় নাগরিক কমিটি(জেএনসি) ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের(এডিএসএম) নেতারা একত্রিত হয়ে নাহিদ ইসলামকে আহ্বায়ক ও আখতার হোসেনকে সদস্য সচিব করে দল গঠন করেন।
অনুষ্ঠানে দলের একটি আংশিক কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়।
সম্মেলনে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ও আরিফুল ইসলাম আদিবকে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এবং তাসনিম জারা ও নাহিদা সারোয়ারকে সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব করা হয়।
এ ছাড়া, হাসনাত আবদুল্লাহকে দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান সংগঠক এবং সারজিস আলমকে উত্তরাঞ্চলের প্রধান সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পেয়েছেন নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী এবং জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সমন্বয়কের দায়িত্ব পেয়েছেন আবদুল হান্নান মাসুদ।
শুক্রবার বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে কোরআন, গীতা, ত্রিপিটক ও বাইবেল তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়।
এরপর জাতীয় সংগীত পরিবেশন এবং জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের সম্মানে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
জুলাই অভ্যুত্থানের সময় শাহাদাতবরণকারী শহীদ ইসমাইল হোসেন রাব্বীর বোন মীম আক্তার আনুষ্ঠানিকভাবে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের নাম ঘোষণা করেন।
পরে সদস্য সচিব আখতার হোসেন আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদের নেতৃত্বের নাম ঘোষণা করেন। কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্য শূন্য পদের নেতাদের নাম শিগগিরই ঘোষণা করা হবে বলে জানান আখতার হোসেন।
এর আগে সামান্তা শারমিন, সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ, নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, নুসরাত তাবাসসুম, আবদুল হান্নান মাসউদসহ বেশ কয়েকজন ছাত্রনেতা বক্তব্য দেন।
নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, “আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিক (দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র) প্রতিষ্ঠার জন্য গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন আমাদের অন্যতম প্রাথমিক লক্ষ্য।”
তিনি বলেন, “আমরা বাংলাদেশকে এবং বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থকে সামনে রেখে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজনীতি এবং রাষ্ট্র বিনির্মাণ করব।”
শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে নাহিদ ইসলাম এ কথা বলেন।
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের তরুণদের নেতৃত্বে গঠিত নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টিকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল, বিএনপি। বিএনপি একটি প্রতিনিধি দলও এই আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে যোগ দেয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “আমরা কোনও রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে না, সবাইকে স্বাগত জানাই। যার-যার রাজনৈতিক আদর্শ ও লক্ষ্য নিয়ে রাজনৈতিক দল এবং রাজনীতি করবে। ইতিপূর্বে অনেক রাজনৈতিক দল হয়েছে, আরও হবে। এতে কোনও সমস্যা নেই। তাদের ইচ্ছা হয়েছে, রাজনৈতিক দল গঠন করেছে।”
তিনি আরও বলেন, “তারা জুলাই-আগস্টে আন্দোলন করেছ, আমরা তাদেরকে বাহবা দিয়েছি। সেই বাহবার ব্যাপ্তি-পরিধি কতটুকু তার পরিমাপ করবে, তারা দল করেছ, তাদের আদর্শ নিয়ে।”
তবে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এই নতুন দলের সাথে সরকারের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
তিনি বলেন, “আমরা বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। আমরা চাই গণতন্ত্র বিকশিত হোক। তাই নতুন দলকে স্বাগত জানাই। দল গঠন সবাই করতে পারে। কিন্তু এই দল যেহেতু সরকারের প্রচ্ছন্ন ছায়ায় গঠিত হয়েছে, তাই জনগণ এই দলকে কিংস পার্টি মনে করতেই পারে।”
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “একটা গণতান্ত্রিক দেশে রাজনীতি করা কিংবা রাজনৈতিক দল গঠন করার সাংবিধানিক অধিকার। আইনের মধ্যে থেকে দল গঠন করার অধিকার সবার আছে। সেক্ষেত্রে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশকে জামায়াতে ইসলামী ইতিবাচকভাবে দেখে।”
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও রাজনৈতিক গুলোর মধ্যে সুস্থ রাজনীতির চর্চার স্থিতিশীলতা গড়ে উঠেনি বলে দাবি করেন জামায়াতের সেক্রেটারি বলেন, “সেক্ষেত্রে ভালো-ভালো শিক্ষিত, মেধাবী, দেশপ্রেমিক, সন্ত্রাস মুক্ত এবং একটা অন্যরকম সংস্কৃতির ধারক-বাহকরা জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করে নতুন বাংলাদেশের কেউ দল গঠন করলে সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা থাকবে। মানুষ চাঁদাবাজ মুক্ত, দুর্নীতি মুক্ত এবং ন্যায়বিচার ভিত্তিক সমাজ গড়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন দলের প্রবেশ নতুন সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি করবে। তারা অবদান রাখতে পারবে। এই জন্য আমরা তাদেরকে রাজনৈতিক ময়দানে আত্মপ্রকাশে স্বাগতম জানাই।”
নতুন এই রাজনৈতিক দলকে নিয়ে একই ধরনের সংশয় প্রকাশ করেছেন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।
বলেন, “প্রথমেই একটা সন্দেহ নিয়ে এটার জন্ম হলো। কেন না, এর প্রস্তুতি প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রযন্ত্র এমনকি উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্যরা সরাসরি জড়িত থেকে এই দল গঠন প্রক্রিয়া অগ্রসর করেছে। যেটা আমাদের নির্বাচনী বিধিতে এক সময় ছিল যে সরকারী চাকরি থেকে রিটায়ার্মেন্টের তিন বছর আগ পর্যন্ত কেউ রাজনৈতিক দল থেকে নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবে না। সূতরাং পৃষ্ঠপোষকতাটা যদি সরকার এবং রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে হয়, তাহলে তার পক্ষে রাষ্ট্র দ্বারাকৃত কোনো অন্যায় হলে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার আশা করা যাবে না।”
তিনি আরও বলেন, “বিরাজনীতিকরণের ত্বত্ত্ব হাজির করার চেয়ে রাজনৈতিক দল হিসাবে সামনে আসাকে ইতিবাচক হিসাবে দেখছি। তবে এটা ছাত্রদের পলিটিক্যাল সংগঠন এমন দাবি করা অযৌক্তিক। আর যেটা (দল) গঠিত হয়েছে, তার নীতি আদর্শ কোন শ্রেণীর পক্ষে, তার কর্মসূচি কী, তা এখনো অজানা। কিছু উপরভাসা মুখের কথা ছাড়া বাস্তবে তার নিদর্শন এখনো যেহেতু জানা যায়নি, সূতরাং এর অতিরিক্ত এই দল সম্পর্কে এই মুহুর্তে বলা সম্ভব নয়।”